বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মর্যাদাবান রমজানের তিনটি বিশেষ মর্যাদা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক: 

আরবি নবম মাস রমজান। এ মাস অন্য মাসের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান। বেশি মর্যাদাবান হওয়ার কারণ তিনটি১. এ মাসে কোরআন মজিদ নাজিল করা হয়েছে, ২. এ মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে, ৩. এ মাসে পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর রয়েছে।

কোরআন নাজিল : কোরআন মজিদসহ সব আসমানি গ্রন্থ এ মাসে নাজিল করা হয়। কোরআন মজিদ ২৪ রমজান, তাওরাত ৬ রমজান, জাবুর ১৮ রমজান এবং ইঞ্জিল ১৩ রমজান নাজিল হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান এমন মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা এই কোরআন মাজিদ। আল্লাহতায়ালা সব নবী-রাসুলকে কম-বেশি অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন। তবে অন্য নবী-রাসুলের মোজেজার সঙ্গে আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-এর মোজেজার পার্থক্য হলো, তাদের মোজেজা ছিল ‘আমলি’ বা কার্যকর। আমলের স্বভাবগত নিয়ম হলো, আমলকারীর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য আগের নবী-রাসুলদের ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সব মোজেজাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন আর হযরত নুহ (আ.)-এর নৌকা নেই, হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর মৃত পাখিকে জীবিত করার মোজেজা নেই, হযরত সোলায়মান (আ.)-এর উড়ন্ত আসন নেই। হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠির মোজেজা নেই, হযরত সালেহ (্আ.)-এর উট নেই। এভাবে বর্তমানে কোনো নবী-রাসুলের মোজেজাই অবশিষ্ট নেই। পক্ষান্তরে বিশ্বনবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা কোরআন মজিদের প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর, এমনকি এর প্রতিটি হরকত তথা জের, জবর, পেশ, তিলাওয়াত পদ্ধতি ইত্যাদি অবিকৃত অবস্থায় পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে। তাই মহানবী (সা.)-এর মোজেজা জীবন্ত ও চিরন্তন। এর ক্ষয় নেই ও লয় নেই। শুধু কাগজে-কলমে নয়, লাখ লাখ হাফেজে কোরআনের সিনায় রক্ষিত আছে। এর কারণ হলো, আল্লাহ নিজেই তা সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ০৯)

কোরআন মজিদ এমন কিতাব, যার কিয়দংশ পরিমাণ রচনা করা মানবশক্তির আওতাবহির্ভূত। আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ‘হে হাবিব! আপনি বলুন, যদি সম্ভব মানব-দানব সম্মিলিতভাবে এ কোরআনের মতো একটি কিতাব রচনা করতে চেষ্টা করো, তবে এর মতো কিতাব রচনা করতে পারবে না। যদিও তারা পরস্পর একে অন্যের সহায়ক হয়। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮৮)

অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! কাফিররা কি বলে যে আপনি এ কিতাব নিজে রচনা করেছেন? আপনি তাদের বলে দিন, তাহলে তোমরাও তার মতো মাত্র ১০টি সুরা রচনা করো।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১৩)

কোরআন মজিদের শৈল্পিক সৌন্দর্য ভাষাবিদদের বিস্মিত করে। এর ভাষার লালিত্য, শব্দ চয়ন, ভাবের মিল, শব্দ যোজনা অতুলনীয়। মানুষ যখন কোনো কিছু রচনা করে, তা হয়তো গদ্য বা পদ্য হয়। কিন্তু কোরআন মজিদ গদ্যও নয়, পদ্যও নয়। গদ্যের মতোও পড়া যায়, আবার পদ্যের মতোও পড়া যায়। কোরআন মজিদের বিষয়বস্তু এমন, যা পৃথিবীর কোনো গ্রন্থে নেই। তাতে রয়েছে জান্নাত, জাহান্নাম, আসমান, জমিন, অন্তরীক্ষ, আরশ, কুরসি, সৃষ্টির কাহিনী, সূর্য, গ্রহ, সৌরজগতের তত্ত্ব, আদম সৃষ্টির রহস্য, ফেরেশতা ও জিনজাতির ইতিহাস, প্রাগৈতিহাসিক নবীদের জীবনচরিত এবং নমরুদ, ফেরাউন, হামান, শাদ্দাদ প্রমুখ কাফিরের ইতিবৃত্ত, আসহাবে কাহাফের অবস্থা, জুলকারনাইনের লৌহ প্রাচীর ইত্যাদির বর্ণনা। যিনি ছিলেন ‘উম্মি’যার ছিল না আক্ষরিক কোনো জ্ঞান, তিনি কোরআন মজিদের সংস্পর্শে এসে হয়ে গেলেন বিশ্বের এক নম্বর জ্ঞানী। এতে রয়েছে রুহানি জগৎ, পার্থিব জগৎ ও পারলৌকিক জগতের বিস্তারিত বিবরণ। আরও রয়েছে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান।

সিয়াম : এ মাসে সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পায়, সে যেন রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

এ মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের মাধ্যম। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান রাখে, সালাত কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করে। আল্লাহর ওপর ওই বান্দার অধিকার হলো, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো।’ (বোখারি, হাদিস : ২৭৯০)

মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘যখন রমজান আসে, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, আর দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯০)

রমজান মাসে দোয়া কবুল করা হয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে যে দোয়া করে থাকে, তা কবুল করা হয়।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২/২৫৪)

এ মাসে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মাহে রমজানে প্রতি রাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২/২৫৪)

শবেকদর : মাহে রমজানের সাতাইশে রজনীকে অনেক মনীষী লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুসলিম শরিফে সাহাবি উবাই ইবনে কাব বর্ণনা করেছেন, শবেকদর হচ্ছে রমজানের ২৭ তারিখের রাত। ইবনে সামেত বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাত২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাত।’

ইমাম জুহুরি (রহ.) বলেন, এ রাতকে কদরের রজনী বলার কারণ হলো, এ রাত অতীব মূল্যবান, অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। শেখ আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) বলেন, এই পবিত্র রাতে ইবাদতের মাধ্যমে এমন অনেক লোক মানসম্মান অর্জন করে, যাদের এর আগে কোনো মানসম্মান ছিল না। ফলে এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলার আরও একটি কারণ হলো, এ রাতে তাকদির নির্ধারিত হয়। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও ফিকাহবিদ শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) বলেন, শবেকদর দুটি। একটিতে বিশ্ব প্রশাসনের বিধিব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়। এই শবেকদর অনির্দিষ্ট। এক বছর এক রাতে, অন্য বছর অন্য রাতে, এভাবে একেক বছর একেক রাতে হয়ে থাকে। অন্যটি হলো কল্যাণ, বরকত, সওয়াব বা নেক বৃদ্ধি ও ফেরেশতাদের অবতরণ ইত্যাদির জন্য। তা রয়েছে রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে। (হুজ্জাতুল্লহিল বালিগা)

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি একে (কোরআনকে) এক পবিত্র রাতে নাজিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির হয়।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ৩-৫)

আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হলো হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতারা ও রুহ তথা জিবরাইল (আ.) অবতীর্ণ হন। প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সালাম সালাম বলে ঘোষণা করেন। আর তা রজনীর উষা পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত : ২-৫)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত তিনটিএক. এ রাতে কোরআন নাজিল হয়। দুই. এ রাত হাজার মাস তথা ৮৩ বছর চার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তিন. এ রাতে জিবরাইল (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের লক্ষণ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কদরের রজনীর আগের দিবসে সূর্য এমনভাবে উদিত হবে যে, এর রশ্মিতে প্রখরতা ও তেজ থাকবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬২)।

লেখক-মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। সূত্র;দেশরূপান্তর।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION